নিরাপদে দেশপ্রেম দেখানোর জন্য দেশের বাইরে থাকা প্রয়োজন!

349

“নিরাপদে দেশপ্রেম দেখানোর জন্য দেশের বাইরে থাকা প্রয়োজন!” – এই উক্তিটি এখানকার একজনের। হয়তো আরো অনেকের মনেই এমন চিন্তা থাকতে পারে। ভালোভাবে চিন্তা করতে গেলে কথাটি কিন্তু মিথ্যা নয়। দেশের ভিতরে থেকে দেশপ্রেম দেখাতে গেলে কেউ নিরাপদ মনে করেনা এখন নিজেকে। তেল দিয়ে কথা বলার সময় তেমন কিছু না ভাবলেও চলে। কিন্তু যদি কোন সত্য কথা বলতে হয় এবং কথাটি ক্ষমতাশীলদের বিপক্ষে যায় তাহলে কিন্তু ভয়াবহ বিপদ হতে পারে। এমনকি সরাসরি ক্ষমতাবানদের বিপক্ষে না হলেও বিপদে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

দেশের ভিতরে নিজের অধিকার নিয়ে বা দেশ নিয়ে কথা বলাযে কতটুকু বিপদের তা সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর দিকে তাকালেই বুঝা যায়। বিশেষ করে গত কালকের ছাত্রদের উপরে হামলা দেখে। নিরাপদ সড়কে চেয়ে সড়কে নেমেছে তারা। তারা সড়কে নেমেছে বিনা কারণে অপঘাতে মৃত্যুগুলোর ঠেকাতে। মন্ত্রী যখন তার অবস্থান থেকে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা না করে হাসিমুখে অন্য দেশের তুলনা দেয় তখন সাধারণ মানুষের সাধারণ চিন্তা করার উপায় আর থাকে না।

কিছু কিছু সমস্যার সমাধানের জন্য অবকাঠামো এবং অর্থের প্রয়োজন হয়। কিছু সমস্যার সমাধানের জন্য প্রয়োজন হয় সদিচ্ছার এবং সঠিক প্রদক্ষেপের। আর কিছু সমস্যার সমাধান হয়ে যায় শুধু সমস্যা রয়েছে এইটা মেনে নিলেই। অফসোসের বিষয় হলো, সমস্যা যে রয়েছে এটা মেনে নিতেই কর্তব্যরতদের অনীহা রয়েছে। কোনভাবেই মানতে রাজি নন তারা যে, সিস্টেমের মূলের কারণে মানুষ মারা যাচ্ছে এবং তাদের কারার অনেক কিছুই আছে। তারা মানতে রাজি নন যে তারা তাদের উপর দেয়া দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছেন না। তারা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। দেশ পরিচালনা করা স্কুলে পড়াশোনার করা মত না। পড়তে ইচ্ছে না হলে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে সময় পার করে দিবেন। হয় যা করার তা করুণ অথবা অন্যকে করার সুযোগ দিন।

গতকালকে জানতে পারলাম যে আমার গ্রামের একজন ছেলে (দিদার) মারা গেছে। আমরা একসাথে প্রাইমারিতে পড়তাম। ছোটবেলার কাছের ২ জন বন্ধুদের মাঝে ও একজন ছিলো। আমি জীবনে প্রথম উপহার কিনেছিলাম ওর বোনের বিয়ের জন্য। অবশ্য বড় হতে হতে ওর সাথে যোগাযোগ করে আসে। ও মারা যাওয়ার পরে প্রথমে ধারণা করা হয়েছিলো রোড এক্সিডেন্ট। কিন্তু শরীরে এক্সিডেন্টের তেমন কোন আলামত নেই। ঠিক কিভাবে মারা গেছে তা এখনও রহস্য। কিভাবে মারা গেছে এটা জানা সম্ভব হচ্ছেনা ওর পরিবারের এবং গ্রামের অন্যদের। সবাই মিলে দাবী জানাবে ভাবছে সুষ্ঠু তদন্তের। অথচ এই তদন্তটা দাবী জানানোর বিষয় হওয়ার কথা নয়। এটা অটোমেটিকভাবেই হওয়ার কথা। জনগনের অধিকার বিচার পাওয়া।

জনগন তার অধিকার চাইতে ভয় পায় এখন। নিজের অধিকারের কথা বলতে গেলেই দেশ বিরোধী হয়ে যেতে হয়। দেশের আলো বাতাসে বড় হয়ে দেশে ভালো নাই বলাটা অকৃতজ্ঞতা হিসেবে ধরা হয়। আর অকৃতজ্ঞতের বিচার নিজ হাতে করার ব্যবস্থাও নেয়া হয়। এইজন্য বোধহয় উপরের উক্তি। দেশে থেকে দেশপ্রেম দেখাতে গেলে দেশ বিরোধী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া যায়, দেশপ্রেমিক না।

Comments

comments