প্রশ্ন ফাঁস আমাদের একটা জাতীয় ইস্যু। অন্য যে কোন সমস্যা থেকে এই সমস্যার গভীরতা অনেক বেশি এবং কম্পাউন্ড ইন্টারেস্টের মত এটা দেশকে ভোগাতে পারে। কিছুদিন আগে এক আলোচনায় একজন দেশের শিক্ষার অবস্থা নিয়ে নানান কথা বলছিলেন। উনি শুধু একটা সময় বলেছেন আগে বিশেষ করে ২০০০ এর আগে দেশে নকলের অবস্থা ছিলো প্রকট। অতি অল্প কিছু মানুষজন ছাড়া বলা যায় সবাই নকল করত। উনি নিজেও দেখেছেন মানুষজন কিভাবে নকল নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাচ্ছে এবং কিভাবে নকল পাঠাচ্ছে কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের কাছে। নকল করে ভালো রেজাল্ট করা শিক্ষার্থীদের পরিমাণ কিন্তু নেহায়েত কম নয় সে সময়।
সেই নকল বন্ধ হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু যারা নকলের সময় উতরে গেছে তারা এখন কোথায়! যাদের জীবনে শিক্ষার ভিত্তি নকল দিয়ে বা তারা এখন কতটুকু নৈতিকতা দিয়ে কাজ করছেন তা ভাবার বিষয়। কি জানি এই একই রকম ভাবনাটা না আরো প্রকট হয়ে যায় প্রশ্ন ফাঁসের ১৫-২০ বছর পরে। যাই হোক ভবিষ্যতের কথা ভবিষ্যতেই দেখা যাবে। বর্তমানে এই প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ হওয়া আবশ্যক এবং তা যে কোন মূল্যে।
প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা উল্টোপাল্টা মন্তব্য করেই যাচ্ছেন। প্রযুক্তির দোষও দিচ্ছেন অনেক সময়। ফেইসবুক বন্ধ রাখার চিন্তাভাবনাও হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু এইসব কি আসতে কোন সমাধান? একটা লিখা দেখলাম যে সময়ের এবং প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হওয়া আবশ্যক। প্রযুক্তি স্যাটেলাইটে চলে যাচ্ছে আর আপনি শিক্ষায় এখনও ৫০-৬০ বছর আগের সিস্টেমে সব রাখতে চাইবেন তাহলে কিন্তু সমস্যা। ওইদিন এখানে এক চেয়ারম্যান বলছিলেন যে সিকিউরিটি এর চাকুরী সবসময় থাকবে। কেননা যতই উন্নত হোকনা কেন সাইবার সিকিউরিটি যারা খারাপ তারা কিন্তু আরো বেশী উন্নতি করছে কিভাবে নিরাপত্তা নষ্ট করা যায় তা নিয়ে। পরীক্ষা বা শিক্ষার ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য বলে আমার মনে হয়। বোর্ডের মাধ্যমে একসাথে এত হাজার স্কুলের পরীক্ষা হওয়াটা কতটুকু সময় উপযোগী তা নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার বলে আমার ধারণা।
আজকে banglanews24 এ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের সংবাদ পড়ছিলাম। সব কথায় প্রধানমন্ত্রীর যুক্তি থাকলেও শুধু একটা কথা মেনে নিতে কষ্ট হয়েছে আমার। “যারা ফাঁস করেছে তাদের ধরিয়ে দেন, ব্যবস্থা নেব। আপনাদের তো সেখানে অনেক সোর্স আছে, ধরিয়ে দিন।” – এই কথাটি কেমন জানি নিতে পারিনা আমি। এর আগেও এমন কথা শুনেছি কিংবা পড়েছি নানান প্রেক্ষাপটে। এই কথাটাই বড়ই অনৈতিক মনে হয় আমার। ধরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা নেই বলে বা ধরিয়ে দিচ্ছেনা দেখে প্রশ্ন করা যাবে না কিংবা প্রশ্ন করে এই কথা বলাটা আসলে ঠিক বলে মনে হয় না আমার। প্রশ্ন ফাঁস বড় সমস্যা। এটার সমাধান হওয়া দরকার। তা যে কোন মূল্যেই হোক না কেন। এই সমস্যার সমাধান না করা গেলে খুব বড় সমস্যার দিকে চলে যাবো আমরা। তখন সরকারের অন্য সব সফলতা ম্লান হয়ে যাবে।
পরিশেষে শুধু প্রশ্ন ফাঁসটা রোধ করা গেলে আমার দেশ একটা ক্রান্তিকাল থেকে উঠে আসতে পারবে। একই সাথে এটা বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তিও অনেকটুকু উজ্জ্বল করবে। দেশের জন্য শিক্ষাটা সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন বর্তমানে। শিক্ষার উন্নতি না হলে জাতি হিসেবে আমাদের মাথা খুব একটা উঁচু থাকবেনা বেশী সময় ধরে। তাই শিক্ষায় হোক বিনিয়োগ। ১৬ কোটি মানুষ সম্পদ হয়ে উঠুক।
বি.দ্র: ছবিটি গুগল সার্চ দিয়ে নেয়া newsg24.com থেকে।