এপ্রিল ২০১৮: Complete most of the tasks before 12 hours of a deadline

487
Working habit chart
Working habit chart

অনেকগুলো বদ-অভ্যাসের মাঝে একটা হচ্ছে আগে করে ফেলার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কোন কাজ একদম শেষ সময় পর্যন্ত ফেলে রাখা। এই অভ্যাসটা পরিহার করা আবশ্যক। যে কাজ যত দ্রুত সম্ভব আগে করে ফেলা প্রয়োজন। আপাতত টার্গেট হচ্ছে যে কোন কাজ ডেডলাইনের ১২ ঘণ্টা আগে শেষ করা। এটা করাটা খুব একটা কঠিন নয়। যে কোন কাজের ডেডলাইন প্রকৃত ডেডলাইন থেকে ১২ ঘণ্টা আগে সেট করতে হবে।

১৬ এপ্রিল: 

সকালে ক্লাস করে ল্যাব মিটিং এ ছিলাম। পাইথন কোর্সের প্রজেক্টে আমাদের এক্সপেক্টেশন আর প্রফেসরের আশা মিলছে না। উনি মূলত ওনার পড়ানোর সাথে রিলেটেড কাজ দেখতে চান। কিন্তু আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ৪৩ গিগাবাইট টুইটস।

আজকে সন্ধ্যা গালিব ভাইয়ের বাসায় গেলাম। ওনার বাসায় অনেকক্ষণ ধরে গল্প হলো, খাওয়া দাওয়া হলো। ভাবী আসাতে সুবিধে হইছে। অবশ্য আগেও ওনার বাসায় গেলে খাওয়া পাওয়া যাইত 😀

ডিপার্টমেন্টের এলামনাই এসোসিয়েশন গঠিত হয়েছে। ভোটের আমেজটা ছিলো সবচেয়ে মজার। পুরো জাতীয় ভোটের মত আমেজ ছিলো। আজকে প্রথম মিটিং ছিলো কমিটির। ট্রিট নিয়ে আলোচনা চলছে। 😀

১৭ এপ্রিল: 

এই দেশে ফলমূল খেয়ে দেশের মত মজা পাওয়া মুশকিল। অভ্যেসের কারণেই মনে হয় এখানে সব স্বাদহীন। আমি নিশ্চিত যে এখানকার মানুষরা আমাদের দেশের ফলে গন্ধ বেশি পাবে। তবে এখানে আম ভালো লাগে আমার। কয়েকদিন আগে শক্ত দেখে পাকা আম কিনেছিলাম। পাকা আম কাঁচা আম হিসেবে বানিয়ে খেয়ে ফেলেছি :P।

আজকে হোমওয়ার্ক নিয়ে ভালো প্রেসার গেছে। কোর্সে গ্রুপ ঠিক করা গুরুত্বপূর্ণ। উল্টোপাল্টা গ্রুপ হলে কাজ কম হয়, বিরক্তি বেশি কাজ করে।

১৮ এপ্রিল: 

কার্জ-কর্ম খাওয়া দাওয়ায় পার হয়ে গেছে আজকের দিন। এগরিদম বইয়ের এক্সারসাইজ নিয়ে ঝামেলায় আছি। মাঝে মাঝে কয়েকদিন সময় লেগে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে নির্ধারিত সময় থেকে কমপক্ষে দ্বিগুণ সময় লেগে যাবে শেষ করতে। এক্সারসাইজ না করেও পড়ে ফেলা যায়। কিন্তু সেইক্ষেত্রে মনে হয়না দক্ষতা আসবে।

১৯ এপ্রিল: 

আজকে কোর্স প্রজেক্টের জন্য আমাদের গ্রুপ ভালো বকা খাইছে। অবশ্য এই বকা খাওয়াটা কিছুটা হলেও এক্সপেক্টেড ছিলো। অন্যসব হোমওয়ার্ক এবং ডেমো ভালোভাবেই শেষ হয়েছে। ব্যাডমিন্টন খেলাটা কেমন যেন আগের মত আর জমে না।

২০ এপ্রিল: 

আজকে সারাদিন কোড করেছি। পাইথনে কোড করতে আমার এমনিতেই মজা লাগে। যদি মনে হয় এই কোড করতে ৫ঘণ্টা সময় লাগবে দেখা যায় যে ২ ঘণ্টায় শেষ হয়ে বসে আছে শুধু পাইথনের জন্য। কোন এক সময় R-টাও চেষ্টা করতে হবে। এইটাও নাকি পাইথনের মতই খুব হায়ার লেভেলের লাইব্রেরি প্রোভাইড করে।

আজকে নামাজের পরে ২.৫ ঘণ্টার মত পিকনিক পিকনিক একটা অবস্থায় গেছে। আমরা মসজিদ থেকে বিরিয়ানি কিনেছিলাম। ওটা নিয়ে চলে গেলাম ভার্জুয়ান পার্কে। ওখানে বাতাসের জন্য ঠান্ডা লাগছিলো। পরে গাড়িতে বসে খাওয়া শেষ করে আমি আর ইভা কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়ালাম এদিক ওদিক। সামার আসাতে সবকিছু সবুজ হয়ে যাচ্ছে। ঘাসগুলো একদমই সবুজ হয়ে গেছে। 🙂

২১ এপ্রিল: 

আগামী কয়েকটা দিন ভালো যন্ত্রনায় যাবে বলে মনে হচ্ছে। মাল্টিক্লাস ক্লাসিফিকেশন এর জন্য ডাটা লেভেলিং করতে হচ্ছে। বিরক্তিকর একটা কাজ। অনেকগুলো টুইটস পড়েও যখন লেভেল করার মত টুইট পেতে কষ্ট হয় তখন অসহায় মনে হয় নিজেকে। কোড করা থেকেও অনেক যন্ত্রনা এই কাজে।

এখানে বছরে দুইবার স্কুলের বাচ্চাদের জন্য ফুটবল (সকার) এর আয়োজন করা হয়। বলা যায় একদম মহা-উৎসব। ৫ বছর থেকে শুরু করে বাচ্চারা থাকতে পারে খেলায়। বয়স হিসেবে ভাগ করা হয় টিমগুলো। আরিজের বয়স ৬ বছর। ওদের টিমের খেলা দেখতে গেলাম। পিচ্চিগুলো মহা আনন্দে গেলে। কোচ থাকাতে ধীরে ধীরে বুজতেছে নিয়মকানুন।

Children soccer
Children soccer

সবচেয়ে মজা ওদের ভাবসাব দেখতে। পুরো প্রফেশনাল ভাব। একটু পরে এসে জুস খাবে, পানি খাবে। মাঝে মাঝে আবার প্লেয়ার চেন্জও হয়। 😀

আজকে আবহাওয়া ভালো থাকার আমরা বিকেলে ক্রিকেটও খেলতে গিয়েছিলাম। অবশ্য রাতে বাসায় এসে খবর হয়ে গেছে। জ্বর আসছে, সাথে দাতের মাড়ি ফুলে অবস্থা খারাপ ব্যআথায়। 🙁

২২ এপ্রিল:

বলতে গেলে আজকে সারাদিনই গেছে পিসির সামনে। চোখে হালকা ব্যাথা আর গায়ে জ্বর-জ্বর ভাব। এর মাঝে কালকে ল্যাব মিটিং এর জন্য কাজ করতে হচ্ছে। কাজ জমে গেছে। মাঝে মাঝে সহজ কাজও মিলতে চায় না। আবার মাঝে মাঝে খুব কঠিন কাজ হুট করে হয়ে যায়। আজকে পাইথনের ১২ নাম্বার হোমওয়ার্ক ছিলো। আর কোন হোমওয়ার্ক না থাকলেই ভালো। অবশ্য ড. চেন এর উপরে কোন আস্থা নাই। মনে হচ্ছে আরো ২টা হোমওয়ার্ক থাকবে আগামী ১০ দিনে।

২৩ এপ্রিল:

সকালে ল্যাব মিটিং ছিলো। মিটিং তেমন আহামরি কিছু হয়নি। ক্লাসিফিকেশনের কাজ আরো কিছুদিন করতে হবে। ঠিকমত মাসখানেক কাজ করে একটা পেপার সাবমিট করা খুব দরকার।

আজকে আমরা অনেক দিন পরে সেমাই খেলাম। অদ্ভুত হলেও সেমাই এর নাম ফেনী সেমাই।  লাচ্ছা সেমাই ছিলো। খেতেও বেশ ভালো ছিলো। আজকে দিনে সব মিলিয়ে ভালো খাওয়া দাওয়া হয়েছে। ইভাকে নিয়ে বিকেলে রেক সেন্টারে গেলাম। আমি ব্যাডমিন্টন খেললেও ইভার বোধহয় বিরক্তিকর সময় গেছে ওখানে।

২৪ এপ্রিল:

আজকে ব্যস্ত একটা দিন গেলো। সকাল থেকেই নাস্তা, মোবাইল ডাটা ম্যানেজমেন্ট কোর্সের প্রজেক্ট মিটিং, এরপর ক্লাস এইসবে দিন পার হলো। আজকাল ইভার শরীরটাও খারাপ যাচ্ছে। গন্ধ সহ্য করতে পারে না একমদই। এত কাছে থেকে না দেখলে হয়ত বুঝতাম না কখনও যে আমাদের মায়েরা কত কষ্ট করে আমাদের নিয়ে। আজকাল মাঝে মাঝেই রাতে আমি সামনের রুমে ঘুমাই। আমার গায়ের গন্ধও ইভা সহ্য করতে পারে না। না জানি কত কষ্টের মাঝে দিয়ে যাচ্ছে।

২৫ এপ্রিল:

উইন্টার ক্রিকেট ট্যুরনামেন্টের প্রাইজ দিলো আজকে। দেশের বাইরে আমরা যখন আসি তখন আমরা বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করি। কেউ কেউ মনে করে দেশের বাইরে এসে যারা স্থায়ী হয়ে যায় তারা দেশের জন্য কিছু করে না। কিছু না করলেও দেশকে রিপ্রেজেন্ট করে। ক্রিকেটে এর আগের বার আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। এইবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে যে ভালো লাগাটা কাজ করছে তার একটা বড় অংশই দেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারার জন্য। আমি নিশ্চিত যে কয়েকটা দেশ মিলে যদি আমাদের টিম হতো তাহলে এই ভালোলাগাটা এত বেশি গতো না।

২৬ এপ্রিল:

রাত ১১টায় মুভি দেখতে গিয়েছিলাম। Avengers Infinity War। এর আগে কোন মুভির প্রিমিয়াম শো আমি দেখিনি। এই মুভি নিয়ে মারাত্মক একটা আগ্রহ ছিলো। এইটাও কিছুটা অদ্ভুত আমার জন্য। অবশ্য মুভি দেখাটা লস হয়নি। আগের যে কোন সুপারহিরো মুভি থেকেই এটা অনেক আলাদা। গত কয়েকদিন ধরেই আমরা সেমাই খাচ্ছি। দেশেও টানা এতদিন ধরে সেমাই খেয়েছি কিনা সন্দেহ আছে আমার। এখানে বোধহয় অনেকদিন পরে খাওয়াতে এত ভালো লাগছে। ইভাকে ঠিকমত সময় দেয়া হচ্ছেনা বলে মাঝে মাঝে মনে হয়। সময় ম্যানেজ করা কঠিন কাজ। আরো সময় দেয়া দরকার।

২৭ এপ্রিল:

আজকে ভাত রান্না করলাম। ভাতের সাথে গ্রিন বিন দিয়ে দিছিলাম। খাবারের পরিমান থেকে কার্বোহাইড্রেট কমানোর চেষ্টা।  আমার বিনের কারণে ইভার ভাতে গন্ধও কম লাগতে পারে এই আশায় ছিলাম। যদিও খুব একটা লাভ হয়নাই। আমরা দুইজনই এক্সাইটিং একটা সময় পার করছি। একটা একটা দিনই আমার কাছে এক এক রকম লাগে। স‌ত্যি বলতে আমার চিন্তা ভাবনার প্যাটার্ন পরিবর্তন করতে হচ্ছে। নতুন অনেক কিছুই পড়তে হচ্ছে, বুজতে হচ্ছে। জীবনে এত রকমের ভ্যারিয়েশন আছে বলেই বোধহয় জীবনটা এত মজার!

২৮ এপ্রিল:

সাধারনভাবে ব্যস্ত একটা দিন গেলো আজকে। ক্লাস প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম বিকাল ৫টা পর্যন্ত ল্যাবে। এরপর ক্রিকেট খেললাম। তারপর বাসায়। বাসায় খাওয়া, ইভা এর সাথে সময় কাটানোয় দিন গেলো। আপনজনদের সাথে দিনশেষে শুধু বসে থাকাই এক রকমের শান্তির। যদিও আমি খুব একটা মনযোগ দেইনা এমন অভিযোগ শুনি সবসময়ই।

২৯ এপ্রিল:

আজকে দিনটা ভালোই ব্যস্ত ছিলো। আজকে পাইথনের প্রজেক্ট রিপোর্ট জমা দিতে হবে এবং কালকে পরীক্ষা আছে এমডিএম এর। রাত ৮টা পর্যন্ত ল্যাবে কাজ করে এরপর বাসায় আসলাম পরীক্ষার জন্য। পড়াশোনা জিনিসটাকে সবসময় মেনে নেয়া কষ্ট। বিশেষ করে যখন জোর করে পড়া লাগে তখন। আজকে দিনটা এমন একটা দিন ছিলো। অবশ্য আর বেশিদিন নেই এই সেমিস্টার শেষ হওয়ার।

৩০ এপ্রিল:

আজকে দিনটা ভালোই মজার ছিলো। রাতে ভালো ঘুম এরপর ল্যাবে গিয়ে অমর্ত্য এর ডিফেন্স দেখলাম। অমর্ত্য আমাদের ল্যাবের সবচেয়ে সিনিয়র ছাত্র। আজকে সে অফিসিয়ালি ড. হয়ে গেলো। কিছুদিন আগেই সে অবশ্য ফ্যাকাল্টি পজিশনে জব পেয়েছে। একটা সময় সব ঠিক থাকলে আমাকেও দিতে হবে এই ডিফেন্স। ডিফেন্সের পরে যে কারো চেহারার দিকে তাকালেই বুঝা যায় যে একটা চরম আনন্দ আছে তার মাঝে। ৫-৬ বছরের কষ্টের পরে কারাগার মুক্তির আনন্দের মত।

Comments

comments