১৬ ফেব্রুয়ারি:
শুক্রবার দিনটা সবসময়ই ভালো লাগে। সামনে ২দিন ছুটি এইটা চিন্তা করেই মানসিক শান্তি পাওয়া যায়। যদি খুব একটা পার্থক্য নেই। তবে এইবার ছুটির দিনে কাজ বেশি থাকবে আরো। ২দিনে প্রজেক্ট রিপোর্ট এবং হোমওয়ার্ক মিলে ৩টা জিনিস।
হৃদয়ের জন্মদিন ছিলো আজ দেশে। অবশ্য বাংলাদেশে ১৭ ফেব্রুয়ারি। তবে এখানে দুপুরেই হয়ে গেল। সবার সাথে কথা বলতে ভালোই লাগে ভিডিও তে। সবাইকেই মিস করি। একসাথে থাকাটা এক রকমের আশীর্বাদ।
আজকে অনেক দিন পরে টেবিল টেনিস খেলা হলো। আজহার ভাই, তওসীফ, রাফি ছিলো। খেলাটা ভুলে গেছি। কনফিডেন্ট কমে গেছে অনেকটাই।
১৭ ফেব্রুয়ারি:
আজকে অনেকক্ষণ আজহার ভাইয়ের বাসায় ছিলাম। পাইথন কোর্সের রিসার্চ প্রপোজাল নিয়ে আলাপ করার জন্য। পরে আশিক এর সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা হলো। ওর পেপার পড়ার স্টাইলটা সুন্দর। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়া একদম। আমার মনে হয়না যে অথোরও এইভাবে পড়ে দেখে নিজের পেপার। তবে বিষয়টা আমার ভালো লেগেছে। মনে হয়েছে রিসার্চে এই জায়গাটায় উন্নতির খুব প্রয়োজন। এখন থেকে চেষ্টা করতে হবে খুব ভালোভাবে ক্রিটিকের মত করে পেপার পড়ার। মনে হচ্ছে এটাই নতুন আঙ্গিকে রিসার্চ শিখতে কাজে দিবে।
আজকে অনেকদিন পরে ছুটির দিনে ল্যাবে গিয়ে গিয়ে ল্যাবে ৫ জন উপস্থিত। অসাধারণ ব্যাপার। ল্যাবে মানুষজন আছে এটা দেখলেই কেমন জানি ভালো লাগে।
১৮ ফেব্রুয়ারি:
রোলাতে সবচেয়ে বড় বাফেটের নাম হচ্ছে ওশান বাফেট। যে কোন রকমের মানুষের জন্যই এখানে কোন না কোন খাবার আছে। মোটমাট বলতে গেলে ৫০ এর বেশি প্রিপারেশন। আমি নিশ্চিত না ৫০ থেকে কত বেশি। ১০০ এর মতও হতে পারে খাবার এর মেন্যু।
গতকালকে গিয়েছিলাম ওখানে আমি, ইভা, আরেফিন ভাই এবং স্বর্ণা আপু সহ। আরেফিন ভাই নামে দুইজন মানুষকে আমি চিনি। এদের মাঝে একজন অলরেডি মাইক্রোসফটের ডেভেলপার এবং অন্যজন এই বছর যাচ্ছে ইর্ন্টান হিসেবে। 😛
বাফেট, কার্ড খেলা ছাড়াও কালকে আরো কাজ হয়েছে। সকাল থেকেই টানা প্রজেক্ট রিপোর্ট নিয়ে কাজ করেছি আবার গভীর রাত পর্যন্ত হোমওয়ার্ক নিয়ে কাজ। সব মিলিয়ে ভালোইতো যাচ্ছে সব। 🙂
১৯ ফেব্রুয়ারি:
ল্যাব মিটিং ছিলো। প্রফেসর বুঝে গেছে যে আমাকে দিয়ে এমনি এমনি কিছু হবে না। তাই বলেছে আগামী সপ্তাহে প্রেজেন্ট করতে দুইটা পেপার। একটা পেপার খুব ভালো করে পড়তে বললো। ২ পেইজের পেপার। পড়েও তেমন আহামরি কিছু নাই মনে হলো। ভাবলাম প্রফেসরকে মেইল দিয়ে বলি ঠিক পেপার কিনা। পরে ভাবলাম ভুল আমারও হতে পারে। ভালো করে আরো কয়েকবার পড়া যাক এই পেপারটা। 😛
২০ ফেব্রুয়ারি:
আজকে ক্লাসে বসে হুমায়ুন আহমেদের বই রিভিশন দিচ্ছিলাম। আড়াই ঘণ্টার ক্লাস, তাও আবার বিকেল ৪টা থেকে। চাইলেও চোখ খোলা রাখতে পারিনা। আবার প্রফেসর যদি বুঝে ঘুমাচ্ছি তাহলে খবর আছে। নিজের প্রফেসর বলে কথা। অগত্যা ল্যাপটপ নিয়ে মাঝে মাঝে কিছু জাভা কোড দেখছিলাম আর এরপর হুমায়ুন আজকে। প্রফেসরের বোধহয় সন্দেহ হয়েছে যে কেউ মনোযোগ দিচ্ছে না। হুট করে বলে ক্লাস এক্সারসাইজ। একটা মোবাইল কম্পিউটিং মডেলের কস্ট (Cost) বের করতে হবে এলগরিদম দেখে। প্রায় দেড় ঘণ্টা ক্লাস সেই। আমার আইডিয়াও নাই ঠিক কোন মডেলেও আছে। গুঁতাগুঁতি করে একটা কিছু বের করার পরে প্রফেসরের চেহারা দেখে বুঝে গেলাম যে কিছু হয় নাই। অবশ্য পরে দেখি ক্লাসের সবারই আমার মত বেহাল দশা! 😛
কোড বুঝে করার আলাদা মজা আছে। আন্দাজে ঢিল মেরে কোড হয় না। এটা জেনেও মানুষ আন্দাজে চেষ্টা করে। মনে করে যে হুট করে মিলে যাবে। আন্দাজে গবেষণা করা যেতে পারে, কোড করা যায় না। 😀
২১ ফেব্রুয়ারি:
ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন এবং অন্য নানা রকম ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদেরকে সম্মান জানাই। নিজের ভাষায় কথা বলার মত শান্তি আর নেই। যারা কারো নিজের ভাষাকে নিয়ে কটুক্তি করে কিংবা অসম্মান করে তারা আসলে মানুষ হতে পারেনি।
আজহার ভাই নতুন ব্যাডমিন্টন ব্যাট কিনেছে। এখনও ভালো-খারাপ ঠিকমত বিচার করতে পারিনি। যদিও ভালো হওয়ারই কথা। ভালো ব্যাটে খেলার মজাই আলাদা। রাতে হুট করে মনে হলো উনো খেলি। কিন্তু খেলার লোক পাওয়া গেলো না। এই আমেরিকাতে ফাঁকিবাজ মানুষ খুঁজে বের করা কষ্টসাধ্য কাজ।
একটা সময় নানান খবর রাখতাম। তথ্য জানতে ভালো লাগতো। এখন আর লাগে না। মনে হয় অনেক তথ্য জানা থেকে অল্প কিন্তু দরকারি তথ্য জানা এবং তা নিয়মিত ব্যবহার করা বেশি জরুরী। ভাবছিলাম যে বাচ্চারা যেভাবে কোন ভাষা শিখে সেভাবে কোন কিছু শেখার চেষ্টা করে দেখতে হবে। প্রথমে, মনকে এখন খালি করে দিতে হবে। কিছু জানিনা এমন। এরপর নতুন করে শিখতে হবে। একজন বাচ্চার জন্য উল্টো সিস্টেমের সাইকেল (ডানে নিলে বামে যাবে, বা বামে নিলে ডানে যাবে। প্যাডেলও একইভাবে উল্টো) চালানো যতটা সহজ একদম মানুষ যে স্বাভাবিক সাইকেল চালাতে জানে তার পক্ষে ততটা সহজ নয়।
২২ ফেব্রুয়ারি:
আমাদের ল্যাব এ বর্তমানে স্টুডেন্ট ৯ জন। এর মাঝে ৪-৫ জন এর বেশি কখনই একসাথে থাকে না। আজকে বলা যায় ৮ জন ল্যাবে ছিলো। তাও সন্ধ্যা ৫টায়। প্রফেসর এসে বলে এতো ব্লু-মুন!
আজকে ইভা মিষ্টিকুমড়া রান্না করছে চিংড়ি মাছ দিয়ে। কোন কিছু স্বাদ দেশের মত হলে ক্ষুধা না লাগলেও খেতে ইচ্ছে করে। আজকেও তাই হয়েছে। মিষ্টি কুমড়া দিয়ে খেয়ে নড়া-চড়া করতে কষ্ট হচ্ছে।
গুগল সার্চ নিয়ে কিছু আর্টিকেল পড়ছিলাম। গুগল সার্চ নাকি নিরপেক্ষ সংবাদ বা সার্চ দেখায় না সবাইকে। আপনি যেমন সংবাদ বা একই সংবাদের যে রকমের ভার্সন বেশি পছন্দ করেন ওই রকমের লিংক আগে দেখাবে। ফলে আপনি সবসময় ফিল্টার করা জিনিস পাবে। ধরে আপনি যে রাজনৈতিক দলের সংবাদ পছন্দ করেন দেখা যাবে একই কি-ওয়ার্ডের সার্চে সেই রাজনৈতিক দলের নিউজ বেশি পাবেন। একই কাজ অন্য দল করলেও জানতে পারবেন না। একই বিষয় উল্টো ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এই কাস্টম সার্চ জিনিসটা অসাধারণ হলেও ক্ষেত্র বিশেষে খুব বিরূপ হতে পারে।
২৩ ফেব্রুয়ারি:
ইভা নতুন জুতা কিনছে। ওর জুতা বোধহয় অনেক পছন্দ। কিন্তু বেশি দাম দিয়ে কখনই জুতা কিনে না। বোধহয় আমার টাকা নাই বলে কম দামি জুতা খুঁজে বেড়ায়। আলতো করে জুতার দাম দেখে রেখে দেয় কিনবে না বলে। আজকে এক জোড়া কম দামি জুতা পাইছে। ৫ ডলারের মত দাম। ৫ ডলারে পছন্দ করার মত জুতা পাইলে যে কোন জামাই এর-ই ভালো লাগার কথা। 😛
আজকে দিনে বছরের সবচেয়ে বেশি খেলা হইছে ব্যডমিন্টন। বাসায় এসে শক্তি বলে কিছু নাই। পরে আবার রবিউল আর সুমনের সাথে মিটিং আছে বলে জেগে থাকলাম। দেশে বিদ্যুতের একটা বিরক্তিকর সমস্যা আছে। এটাই ভুলে গিয়েছিলাম। ওদের সাথে কথা বলতে গিয়ে আমার ভুলে যাওয়া স্মৃতিগুলো সামনে আসলো।
আজকে জুমার নামাজের পরে একজন মানুষ মুসলমান হলো। তার নাম নিক (Nick)। অন্য মানুষজন বুঝে-শুনে আমাদের ধর্মে আসে আর আমরা পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ধর্ম বোঝার কোন চেষ্টাই করি না।
২৪ ফেব্রুয়ারি:
আজকে শাহীন এর বাসায় পার্টি ছিলো। মাসুদ ভাই এর বিয়ের পার্টি। যে কোন অনুষ্ঠানে এখন কার্ড এবং উনো খেলা হয়। দুইটা খেলাই এডিক্টিভ। বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ১টা (২৫ ফেব্রুয়ারি) বেজে গেলো। খাওয়াও হয়েছে সেইরকম। মাসুদ ভাইয়ের বিরিয়ানি এখানকার সেরা। অবশ্য আসলেই অসাধারণ। এরপর রাতে ছিলো শাহীনের চা!
আজকে দিন মূলত ঘুমিয়ে কাটিয়েছি। মাঝে যা কিছুক্ষণ জেগে ছিলাম Quora পড়েছি আর ঘণ্টাখানেক একটা পেপার পড়লাম। পেপারে ইকুয়েশন এবং সম্ভাব্যতা ছাড়া অন্য সব কিছুই পড়তে ভালো লাগে। এই দুইটা জিনিস এখনও ঠিকমত নিতে পারি না। এই সমস্যার সমাধান দরকার। এই দুইটা জিনিসের জন্যই অনেক পেপার পড়ে কোন মজা পাই না। 🙁
২৫ ফেব্রুয়ারি:
আজকে দিনটা বলতে গেলে পড়ালেখায় গেলো। সকাল থেকে পেপার পড়া শুরু করেছি। দুপুরে খেয়ে ঘুম। ৫টার দিকে উঠে আবার পেপার পড়া এবং একটু আগে থামলাম। মাঝে ছিলো রাতের খাওয়া এবং একটা হোমওয়ার্কের কাজ। সকালে উঠে আবার পেপার পড়া শুরু করতে হবে। কালকে আবার ক্লাসে কি জানি ওয়েবসাইট নিয়ে কি করতে হবে।
আজকে ইভা থেকে জানতে পারলাম একটা মানসিকভাবে অসুস্থ মহিলার (পাগলী) ঘটনা। গত কয়েকদিন ধরেই নাকি এটা নিয়ে নানান সংবাদ হচ্ছে। একুশ তারিখে ওই মহিলা একটা মেয়ের জন্ম দিয়েছে একা একটা মাঠে রাতের বেলায়। কিছু সাহসী ছেলের (অমি, সাগর, ইব্রাহীম এবং আজিজ) এর চেষ্টায় মা ও মেয়েকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে সুস্থ রাখা সম্ভব হয়েছে। একটা মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষও নিস্তার পায় না পশুদের থেকে। না জানি কতটা কষ্ট করেছে সে প্রায় ১ বছর। 🙁
২৬ ফেব্রুয়ারি:
ল্যাব মিটিং এ আজকে প্রফেসর খুব মুডে ছিলো। সবাইরেই কম বেশি জ্বালাইছে। 😛 আজকে ডাটা কনটেস্ট ছিলো পাইথন কোর্সে। ওয়েবসাইট থেকে পাইথন ব্যবহার করে ডাটা সংগ্রহ করতে হবে এবং সেটা ফরম্যাট ঠিক করে সেইভ করতে হবে। জিনিসটা শেখার মতই ছিলো। বোনাসও কাজ, করতে পারলে কোর্সে ২ মার্ক যোগ হবে। যদিও করতে করতে ডেডলাইন শেষ। 😀
আমার ব্যডমিন্টন খেলা সাধ্যের বাইরে হয়ে যায় মাঝে মাঝে। আর এটার ইমপ্যাক্ট অন্যসব কাজে পড়ে। এক দিকে আসক্তি কমাতে না কমাতেই মত অন্য দিকে ছুটে যায়।
২৭ ফেব্রুয়ারি:
সকালে উঠেই সিদ্ধান্ত নিলাম যে ভার্সিটিতে যাবো না। শরীরটা কেমন যেন ভালো লাগছিলো না। কিন্তু পরে হুট করে হোমওয়ার্কের ডেমো দেখানোর জন্য যেতে হলো। যদিও বিকেলে আর ক্লাসে যাই নাই। মাঝে দুপুরে একটু ঘুরতে বের হয়েছিলাম ইভা এবং জাকির সহ। জাকির অবশ্য অনলাইনে ভিডিওতে ছিলো। অনেকদিন পরে টানা গল্প করা হলো।
২৮ ফেব্রুয়ারি:
আজকেও সকালে ক্লাসে গেলাম না। এই সেমিস্টারে আশা করি আর মিস হবে না ক্লাস। এখনও ছোটবেলার মত মাঝে মাঝে ক্লাসে যেতে ইচ্ছে করে না। প্রফেসরের সাথে মিটিং ছিলো। রিসার্চে হতাশাজনক সময় হলো যখন ঠিক কি নিয়ে কাজ করবো এটা ঠিক না করা যায় এবং যে সমস্যা নিয়ে কাজ করার কথা তা যদি হুট করে প্রকাশিত হয়ে যায়। কি আর করা নতুন করে ভেবে চিন্তে কোন একটা নতুন সমস্যা নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। আজকে অনেকদিন পরে খেলা হয় নি। ভালোই হয়েছে এক দিক থেকে। বিরতির দরকার আছে সব কিছুতেই। কালকেও খেলা না হতে পারে আমার। পরশু পরীক্ষা আছে। যদিও পরীক্ষার জন্য সাধারণত আমার কোনকিছু বাদ যায় না। আগামীকাল সকাল নাগাদ বুঝে যাবো অবস্থা। 😀