অল্প করে হলেও বছরের প্রথম ১৫ দিনই একটু একটু করে লিখা হলো। নতুন পোস্ট আবার ১৫ দিন। কিছু একটার অভ্যেস থাকা ভালো। ভালো অভ্যেস ছোট হলেও খুব কাজের। গাছের মত। একসময় ফল দেয়া শুরু করবে। তখন ছোট জিনিসটাই বড় আকারের রূপ লাভ করবে। বরফ পড়েছে। আশেপাশের সবকিছু শুভ্র-সাদা হয়ে আছে। ফিচার ইমেইজের ছবিটা লায়নস ক্লাব রোলা, মিসৌরি এর। আশপাশটা এখন এমনই হয়ে আছে। ছবিটা আমার তোলা নয়। ভিজিটরোলা থেকে ধার নেয়া।
১৬ জানুয়ারী:
আজ আমার জন্মদিন। ডেইট হিসেবে। দেশে এবং এখানে (USA) দুই জায়গাতেই একইসাথে জন্মদিন। দেশের বাইরে থাকায় এখন জন্মদিন ৪৮ ঘণ্টা থাকে।
আজকে থেকে স্প্রিং এর ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু হয়নি। খারাপ আবহাওয়ার জন্য বন্ধ সব। জানালা দিকে তাকিয়ে দেখলাম রোদ্রজ্জ্বল পরিবেশ। কিন্তু ঠান্ডা অনেক। -২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সাথে হিমেল হাওয়া। বাইরে ৪-৫ মিনিট থাকলেই অসুস্থ হয়ে যেতে হবে যে কারো। তাই বন্ধ ঘোষণা করেছে ভার্সিটি। জন্মদিনে একটা ছুটি পাওয়া গেল। 😀
এই জন্মদিন একদম সাদামাটা। কেউ ছিলো না সাথে ইভা ছাড়া। আর দেশে পরিবার। কোন কিছু হয়নি, কেক কাটাও না। কেন জানি ইচ্ছে করছিলো না। বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। বুড়ো বয়সে পড়াশোনাও খুব একটা ভালো লাগে না। চিন্তুা করতে ভালো লাগে। ওহ একটা টপিক নিয়ে লিখবো ভাবছি – Synesthesia
১৭ জানুয়ারী:
সেমিস্টারের প্রথম ক্লাস, হুহ! প্রথম ক্লাসে এখনও কেমন জানি স্কুলের মত অনুভূতি কাজ করে। চাইনিজ প্রফেসর, অলওয়েজ চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু নতুন ফ্যাকাল্টি, অনেক কোড করাবে বোঝা যাচ্ছে। দেখা যাক কতটুকু কি হয়!
সুপারভাইজরের সাথে অনেকদিন পরে দেখা হলো। ওঁনার সাথে দেখা হলেই ভালো লাগে। মিষ্টি হাসি দেখলেই মনে হয় এভরিথিং ইজ গোয়িং ফাইন!
১৮ জানুয়ারী:
ল্যাব-এ টাইম কাটানো শুরু করলাম বেশি করে। বিকেলে ঘুম আসে খুব। এই ঘুম তাড়ানোর জন্য এই ব্যবস্থা। নিয়মিত ল্যাবে থাকা হবে সন্ধ্যা পর্যন্ত। দুপুরে ভাত না খেয়ে ফল খেলে ভালো কাজে দেয়। ঘুম কম আসে!
Quora, আমার ফেইসবুক নিয়ে দেয়া এক উত্তর ১০,০০০ জন মানুষের কাছে ইমেইল ডাইজেস্টে পাঠিয়েছে। আগে অন্যদের ভালো লিখাগুলো যখন ইমেইলে পেতাম তখন খুব আগ্রহ নিয়ে পড়তাম। ওদের এলগরিদমটা অসাধারণ।
দেশ থেকে পাঠানো মেরিল লিপজেল পেয়েছি। ইউএসএ তে এই লিপজেল এর ভালো কোন বিকল্প এখনও পাইলাম না। স্কয়ার রকজ!
১৯ জানুয়ারী:
চাইনিজ ভাষাতে নাকি ৩টা লেভেল। অন্য ভাষা যেমন বাংলাতে, বর্ণ এরপরেই শব্দ। চাইনিজ বা মান্ডারিনে প্রথমে স্ট্রোকস বা নানান দাগ, এই দাগগুলোর অর্থবহ এবং আলাদা একটার থেকে একটা। এই দাগগুলো মিলে ক্যারেক্টার তৈরি করে। ২০০০+ ক্যারেক্টার আছে। ক্যারেক্টারগুলো অনেকটা বর্ণের মত কিন্তু প্রাইমারি একটা অর্থ থাকে। আর এই ২০০০+ ক্যারেক্টার মিলে শব্দ তৈরি করে এবং এইসব মিলে বাক্য। এইজন্যই বোধহয় কঠিন এত!
ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু করলাম। এখানে নিয়ম আলাদা। ২১ এ গেইম। সার্ভ করার সময়ও অপনেন্ট পয়েন্ট পেতে পারে। ইন্টারন্যশনাল নিয়মই বোধহয় এমন।
আমার নতুন একটা পেপার একসেপ্ট হইছে। এই পেপারের কাজটা আমার পছন্দের ছিলো। অনেকদিন ধরে পেপার লিখার কাজ শুরু করা হচ্ছে না। এই সেমিস্টারে একটা চেষ্টা করা দরকার।
২০ জানুয়ারী:
অনেক দিন পরে নানান ভর্তা দিয়ে ভাত খাওয়া হলো। ভর্তা জিনিসটাই অন্যরকম, যে সব জাতি খায় নাই তারা দূর্ভাগা।
২১ জানুয়ারী:
নতুন কিছু ঘটেনি। অন্য সব দিনের মতই। Quora তে লিখার পরিমাণ বেড়েছে কিছুটা।
২২ জানুয়ারী:
বন্ধের পরে প্রফেসরের সাথে প্রথম রিসার্চ নিয়ে মিটিং হলো। আইডিয়া নিয়ে তিনি খুশি হলেও নিজের কাজ নিয়ে খুশি হওয়ার মত কিছুই নেই আমার। অনেক কাজ বাকি।
Thor Ragnarok দেখলাম। ইভার কাছে সাই-ফাই মুভি নাকি আলিফ লায়লার মত লাগে। বিশ্বাস করবো কেউ এই মেয়ে একসময় গ্যালাক্টিকার জন্য নি:সঙ্গ অভিযাত্রী নামে সায়েন্স ফিকশনও লিখেছিলো!
২৩ জানুয়ারী:
রিসার্চ ইজ ফান! শুধু আমাদের রিসার্চের জন্য প্যাশন খুঁজে পেতে হবে। আমি রিসার্চে মজা পাই, কিন্তু এরপরেও কোন একটা কারণে সুর মিলে না, সবকিছু একই সুরে বাজে না। আমার নিজের থিংকিং প্যাটার্ন পরিবর্তন করতে হবে।
২৪ জানুয়ারী:
শুনেছিলাম চাইনিজ আর কোরিয়ানদের সাথে নাকি ব্যাডমিন্টন আর টেবিল টেনিস খেলতে নেই। আজকে প্রমাণ পেলাম। এক চাইনিজ মহিলার সাথে কিছুক্ষণ খেলে দফারফা অবস্থা। পরে আমাদের কিছু টেকনিক শেখালেন। এরপর বললেন ৪০ বছর ধরে নাকি উনি ব্যাডমিন্টন খেলেন। বয়স যে কত আল্লাহ জানেন! এই বয়সে এত স্ট্যামিনা একটা মানুষের কেমনে থাকে!!
২৫ জানুয়ারী:
কালকে রাত থেকেই গায়ে খুব ব্যাথা। বসতে গেলে আর উঠতে গেলে বিশেষ করে। অবশ্য বিকেল নাগাদ ব্যাথা কমে গেছে অনেক। আজকে আমি আর ইভা গিয়ে On the Run থেকে এইটা ওইটা নিয়ে আসলাম কুপন দিয়ে ফ্রি। ইভা খুবই আপ্লুত! জীবনে এই প্রথমবারের মত কোন দোকান থেকে ফ্রি খাওয়ার কিছু নিয়ে আসতে পারছে! 😛
২৬ জানুয়ারী:
ঘটনাবহুল দিন। ইভা ড্রাইভার পারমিট পাইছে। আমার সাথে ক্লাসও করে ফেলছে একটা। যদিও কপাল খারাপ। আজকে প্রফেসর মেশিন লারনিং পড়াইছে। কিছু বুঝেছে বলে মনে হয় না বেচারি। তার উপরে চাইনিজ প্রফেসর, কথা বুজতেই কষ্ট হয়। প্রথমবারের মত হুট করে ইন-ক্লাস কুইজের অভিজ্ঞতা পেলাম এখানে। প্রশ্ন সহজ তাই কোনমতে পার পাইছি।
মোবাইল এবং সেন্সর ডাটা কোর্সটা মজার। সত্যি বলতে গেলে বিগ ডাটা থেকেও বেশি মজা লাগছে। আমাদের বিএসসি তে পড়ানো অনেক কিছুই রিপিট হচ্ছে। অবশ্য প্রথম দুই ক্লাসে বিএসসি তে মোবাইল কমিউনিকেশন নি যা যা পড়েছিলাম তার ৭০% পড়ানো শেষ। ২.৩০ ঘন্টা করে এক একটা ক্লাস!
২৭ জানুয়ারী:
অনেক দিন পরে ক্রিকেট খেলা হলো। যদিও ফালতু খেলেছি। সবচেয়ে অলস প্লেয়ার হিসেবে উপাধিও পেয়েছি।:P
২৮ জানুয়ারী:
একদিন খেললে বোধহয় আমার এক সপ্তাহ গায়ে ব্যাথা থাকে। আজকে সারাদিনই গায়ে ব্যাথা ছিলো। অবশ্য আজকে দিনটা ভালো গেছে চা-পার্টি এর জন্য। উনো খেলার মজাই অন্যরকম!
২৯ জানুয়ারী:
আজকে ক্যাম্পাসে যেতে হইছে ৪ বার আর বাসায় ফিরছি ৫ বার। অবশ্য এর মাঝে একবার আসা-যাওয়া রেক সেন্টারে ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য।
রিজেকশনেও মানুষ খুশি হতে পারে। সবাই পারস্পেক্টিভের উপরে নির্ভরশীল আসলে। মানুষ চাইলে খারাপ অবস্থাকে ভালো কিংবা বিপরীতভাবে ভালো অবস্থাকেও খারাপ হিসেবে নিয়ে সুখী বা দু:খী হতে পারে। এইজন্য বোধহয় বলে, সুখ নিজের মাঝে!
৩০ জানুয়ারী:
কানের ময়লা হিসেবে আমরা যে জিনিসটাকে চিনি তাকে ওয়্যাক্স বলে। মোমই বোধহয় এটা। ডাক্তাররা কানের ভিতরে কটনবাড ঢুকানোর ঘোর বিরোধী। আজকে জানলাম কিভাবে কানের ময়লা পরিষ্কার করে। কানের ভিতর বড় সিরিঞ্জ দিয়ে জোরে পানি ঢুকানো হয়। আর এতেই নরম হয়ে ময়লা বের হয়ে আসে। অবশ্য অনেকের নাকি কানে পানি ঢুকলে কান পাকে। জানিনা কতটুকু কি কাহিনী!
রুটিন লাইফ শুরু করার চেষ্টায় আছি। যদিও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। কেননা রুটিন হিসেবে এতক্ষণে আমার ঘুমাই যাওয়ার কথা। 🙁
৩১ জানুয়ারী:
সামাজিক যোগাযোগের কোন ওয়েবসাইট (ফেইসবুক মূলত) সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করবো না এটা ঠিক করার পরে আজকে ১ মাস হয়ে গেলো। ১ মাস ধরে ফেইসবুক ব্যবহার না করে থাকতে পারছি এটা চিন্তা করেই অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করছে। নিজের উপরে আস্থা বেড়েছে মনে হচ্ছে।
মাঝে মাঝে কিছু কাজ করতে গেলে কেন জানি মাথা ঝিম-ঝিম করে আমার। মনে হয় যে কোনভাবে কিছু বুঝছি না। আন্দাজে ঢিল মেরে যাচ্ছি এই আশায় যে যদি লেগে যায়। এই স্বভাবটা ভালো কিছু নয়। এটা ঠিক করতে হবে। যে কোন কাজটেই ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের মত কতগুলো পার্টস এ ভাগ করে ফেলতে হবে। এরপর একটা একটা পার্টসের কাজ শেষ করে জোড়া লাগাতে হবে। আপাতত এটা ফেব্রুয়ারী ২০১৮ এর লক্ষ্য।