আমরা জীবনে অনেক সময়ই ভাবি এই আমাকে দিয়ে আর কিছু হবে না। জীবনের প্রতিটা সপ্তাহ যদি নিয়মিত ট্র্যাক করা হয় তাহলে দেখা যাবে যে, বেশিরভাগ সময়ই আমরা বলার মত কিছু না করে বা আজাইরা কাজে পার করে ফেলেছি। একজন মানুষ যদি ৬০ বছর বাঁচে তাহলে তার জীবনে মোট ৩১২৮ সপ্তাহ। আমরা পড়াশোনা শেষ করতে করতে মোটামুটি ২৫-২৮ বছর শেষ করে ফেলি যা প্রায় ১৩০০ সপ্তাহ (যদি ২৫ বছর হয়)। ৬০ বছর বাঁচলে বাকি রইলো আর মাত্র ১৮০০ সপ্তাহ। যদি সপ্তাহগুলো এক একটা বক্স হয় এবং আমরা যদি কি করেছি তার উপর বক্সগুলোকে আলাদা রঙ করি তাহলে দেখা যাবে বেশিরভাগ বক্সই একই রঙের। খাওয়া, ঘুম, পড়া, খেলা, আড্ডা এইসব ছাড়া তেমন কিছু নেই। এখন প্রশ্ন হলো, জীবনের বাকি ১৮০০ সপ্তাহ কি নানান রঙের হবে নাকি তাও অফিস, পরিবার, খাওয়া, ঘুম, আড্ডা এইসব নিয়ে একই রঙের হয়ে থাকবে। আমি গত ২ মাস আমার নিজের জীবন খেয়াল করে দেখলাম যে, বলার মত বা ইমপ্যাক্ট ফেলার মত সপ্তাহ আছে মাত্র ১টা। তার মানে হচ্ছে আমি এমন কিছু করিনা যা আমার পরের সপ্তাহ কে আগের সপ্তাহ থেকে আলাদা করবে।
আমাদের সপ্তাহগুলো হলে পারে একই রকম; নিচের মত সাদাকালো, একঘেয়ে।
হতে পারে নিচের মত কিছুটা রঙিন। ভিন্নতা আছে কিছু খুব বেশি কিছু বলার মত নয়।
আবার হতে পারে একদম ভিন্ন। থাকতে পারে নতুন কিছু করার, বলার মত উত্তেজনাময়। ঠিক নিচের মত।
সিদ্ধান্ত কিছু আমাদের নিতে হবে। যেমনটা চাই ঠিক তেমনভাবে জীবনটাকে গড়ে নিতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো, জীবনের ১৩০০ সপ্তাহ একই রকমভাবে পার করার পরে আমরা কিভাবে কি করতে পারি?
#১৩০০ সপ্তাহ পরে আমাদের কাছে কি আছে বলার মত? একটা বা একাধিক সার্টিফিকেট, হয়ত কিছু টাকা পয়সা, কিছু ভালো ভাগ্য হলো হয়ত বউ-বাচ্চা, চাকুরী, নিজের কোম্পানী বা বাবার টাকা। বেশিরভাগের হাতেই সার্টিফিকেট ছাড়া কিছু আসলে থাকে না। এই অবস্থা থেকে কিভাবে নিজের সপ্তাহ পাল্টানো যায়? একটা সহজ উপায় হচ্ছে জীবনের সব দিকে শতকরা ১ ভাগ করে উন্নয়ন করা। শতকরা একভাগ উন্নয়ন শুনতে সহজ মনে হয় অতটা সহজ নাও হতে পারে। আবার এর প্রভাবও হতে পারে অদ্ভুত এবং ব্যাপক।
নিজের জীবনের সবদিকে ১% উন্নয়ন করতে হলে যা লাগে তা হলো আগ্রহ। আর এই ১% হতে হবে সবদিকে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবহার, খেলাধূলা, শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম, অন্যদের সাথে সম্পর্ক এবং যোগাযোগ, দক্ষতা, খাওয়া ইত্যাদি সবদিকে। শুনতে ১ভাগ খুবই ক্ষুদ্র মনে হলেও এই ১ ভাগই কয়েক বছরের মাঝে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দিতে একজন মানুষকে। চিন্তা করে দেখুন তো গত ৫ বছরের আপনার খাবারের মানের পরিবর্তন কতটুকু হয়েছে? কিংবা ভেবে দেখুন তো গত ৫ বছরের কতটুকু উন্নয়ন হয়েছে আপনার শরীরগত দিক দিয়ে?
২০১০ সালে Dave Brailsford বিট্রিশ প্রফেসনাল সাইকেলিং টিমের পারফরম্যান্স ডাইরেক্টর হিসেবে নিয়োগ পান। কোন ব্রিটিস সাইকেলিষ্ট এর আগে কখনও ট্যুর ডি ফ্রান্স জিততে পারেনি। এটা একটা প্রেসটিজিয়াস প্রতিযোগিতা সাইকেলিং এ। ডেভ ৫ বছরের একটা পরিকল্পনা হাতে নেয়। প্লান ছিলো খুবই সাধারণ। সব দিক থেকে সাইকেলিষ্টদের শতকরা ১ ভাগ উন্নয়ন করতে হবে। তিনি খুব ক্ষুদ্র বিষয়গুলোতে এই উন্নয়নের দিকটা খেয়াল রাখেন। যেমন, পরিষ্কার পরিছন্নতা, কিভাবে হাত পরিক্ষার করতে হবে, কেমন খাওয়া ও পরিশ্রম দরকার, এমনকি কোন বালিশে ঘুমালে ভালো ঘুম হবে এইসবও। (আপনি কি কখনও ভেবেছেন আপনার ঘুমের অবস্থার কিছু উন্নয়ন দরকার? গত কয়কেবছরে ঘুমের কোন কিছু পরিবর্তন হয়েছে আপনার? )
ছোট ছোট বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেয়ার পরে ফলাফল ছিলো মারাত্মক। মাত্র ৩ বছরের মাথায়ই জিতে যায় ট্যুর ডি ফ্রান্স। শুধু তাই নয় ২০১২ সালের অলিম্পিকে ৭০ ভাগ স্বর্ণপদক জিতে যায় ব্রিটিশ সাইকেলিষ্টটা। সবকিছুর মূলে কিন্তু রয়েছে ওই ১ভাগ উন্নয়ন সব দিক থেকে।
আমাদের জীবনের জন্যও এটা খুবই কার্যকরী। জীবনের সব দিকের একটু পরিবর্তন পাল্টে দিতে পারে আমাদের সবকিছু। সপ্তাহগুলো করে দিতে পারি রঙিন ও গুরুত্বপূর্ণ। ১%, খুব বেশি কিছু নয়। কিন্তু এই ১% পাল্টে দিতে পারে আপনাকে, আমাকে, আমাদের পৃথিবীকে। 🙂