আমার পরিচিত যারা ফ্রিল্যান্সিং এ নতুন কিংবা শুরু করবে বলে ঠিক করে তাদের বেশিরভাগই আমাকে যে প্রশ্ন করেন তা হলো,
“কাভার লেটার কিভাবে লিখবো?”
এই পোষ্টে আমি চেষ্টা করছি আমার কিছু অভিমত তুলে ধরার। পয়েন্ট করে নিচে লিখলাম।
১. কাভার লেটার লিখার জন্য বেশ কিছু ইংরেজি ফরমেট পাওয়া যায়। ওগুলো থেকে যে কোন একটা ফলো করতে পারেন লিখার জন্য। শুধু ফরমেট অনুসরণ করবেন। কিছু ফরমেটের লিংক:
http://earnrock.com/odesk-best-cover-letter-sample/
http://odesksamplecoverletters.blogspot.com/p/odesk-cover-letter-samples.html
নিচে একটা পিডিএফ লিংক দেয়া হলো যেখানে একসাথে নানান রকমের জবের জন্য কাভার লেটার স্যাম্পল পাবেন।
divinegp.com/admin/pdocument/1.pdf
২. ফরমেট বুঝলেন। ঠিক করুন কেমন ফরমেটে আপনি আবেদন করবেন। এখন যেটা প্রয়োজন তা হল, জব ডেসক্রিপশনটা ভলো করে পড়া এবং বুঝা। প্রথম দিকে চেষ্টা করবেন, আপনি যে সব জবে নিশ্চিত যে খুব ভালোভাবে করতে পারবেন এমন জবে আবেদন করতে। তাহলে আপনার কাজ নিয়ে ক্লায়েন্ট সন্তুষ্ট থাকবে এবং ভালো রেটিং পাবেন।
৩. জবটা কি, কি করতে হবে আপনি বুঝলেন। আবার এমনও হতে পারে কিছু ব্যাপারে আপনি কনফিউশনে আছেন। যেটাই হোক না কেন আপনি চেষ্টা করবেন কিছু গঠনমূলক প্রশ্ন করতে। এটা বেশিরভাগ সময়ই ক্লায়েন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তবে খুব সহজ জবে এই কাজটা করতে যাবেন না। তাহলে আপনার অজ্ঞতা হিসেবে এটাকে ক্লায়েন্ট ধরে নিতে পারে।
৪. কাভার লেটার লিখার সময় একটা ব্যাপার খেয়াল রাখবেন। তা হলো ক্লায়েন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ। এমন কিছু কথা বলবেন যাতে ক্লায়েন্ট অন্তত আপনাকে উত্তর দেয়ার কথা চিন্তা করেন।
৫. সবসময় চেষ্টা করবেন জব ডেসক্রিপশনের সাথে মিলে এমন কিছু কাজের উদাহরণ দেখাতে। এই ব্যাপারটা ক্লায়েন্ট খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখে।
৬. চেষ্টা করবেন একটা কাজে কি পরিমাণ সময় লাগতে পারে এবং খরচ সম্পর্কে একটা ধারণা দিতে। বিশেষ করে ঘণ্টায় কাজ করার সময়। এটার ফলে ক্লায়েন্টের মনে হবে আপনি কাজটা ভালো করে বুঝেছেন এবং আপনি নিশ্চিত যে আপনি এটা পারবেন।
৭. ভুল ইংরেজি পরিহার করবেন। দরকার হলে একদম সহজ কথা লিখবেন, সহজ শব্দ দিয়ে। তাও যাতে শুদ্ধ হয় আপনার লিখা।
৮. অনেকেই মনে করেন যে অল্প রেটে বিড করলে কাজ পেতে সুবিধা হবে কিংবা ভালো হবে। এটা ভুল ধারণা। আপনি অল্প রেটে বিড করলে ক্লায়েন্ট আপনার যোগ্যতা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যাবে। আপনি বিড ঠিকমত করুণ আপনার যোগ্যতা অনুসারে। অভিজ্ঞদের থেকে একটু কমে বিড করতে পারেন। কিন্তু বেশি কমে নয়। দরকার হলে কাভার লেটারে বলুন যে, আপনি এই মার্কেট-প্লেসে নতুন। আপনি আপনার ক্যারিয়ার করতে চান। ক্লায়েন্ট যাতে আপনাকে কাজ দিয়ে টেস্ট করে দেখে।
মোট কথা হলো আপনাকে অল্প কথা বুঝিয়ে দিতে হবে যে, আপনার কাজটা করার মত যোগ্যতা আছে। আর এটা প্রমাণ করার জন্য কিছু স্যাম্পল দিয়ে দিতে হবে। একই সাথে যদি সম্ভব হয় এমন কিছু কথা বলতে যা ক্লায়েন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে। মনে রাখবেন সবাই নিজের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করবে ক্লায়েন্টকে কনভিন্স করতে। এত জনের মাঝে কেন আপনাকেই ক্লায়েন্ট হায়ার করবে? উত্তরটা সাধারণ। আপনার যোগ্যতা এবং আপনাকে হায়ার করলে ক্লায়েন্টের খরচ। এইটা দুইটা ব্যাপার যদি সুন্দর করে মিলে যায় তাহলে ক্লায়েন্ট আপনাকে হায়ার না করে যাবে কোথায়!
আমি খুব ভালো লিখতে পেরেছি বলে মনে হয় না। যাই হোক যদি কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হয় কিংবা কোন প্রশ্ন থাকে নিচে কমেন্ট করুন। ভুল-ভ্রান্তি থাকলে ক্ষমা করে দিবেন। চাইলে আমাকে ফেইসবুক কিংবা এখানে মেইলও করতে পারেন। চেষ্টা করবো সময় করে উত্তর দিতে।
পোস্ট শেষ করার আগে বিডিং নিয়ে আমার একটি মজার অভিজ্ঞতার কথা বলি।
একবার দুষ্টামি করে একটা জবে আমি ৮০ ডলার বিড করি। কাজটা সিম্পল। শুধুমাত্র ক্লায়েন্টের ওয়াডর্প্রেস সাইট একটা পিএইচপি এরর দিচ্ছে। মোটামুটি ২০-২৫ মিনিটেই হয়ে যাবে এমন কাজ। এত বিড করার কারণ ছিল তখন কয়েকদিন কাজ পাচ্ছিলাম না। ভাবলাম দেখি মজা করে।
অবাক হয়ে গেলাম যখন ক্লায়েন্ট নক দিল। তার প্রশ্ন, আমি এত বিড কেন করলাম? সবাই তো ৫-১০ ডলার বিড করছে। এত বিড করার কোন কারণ আছে কি! আসলেই কি বড় সমস্যা?
আমি শুধু উত্তর দিলাম যে, আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। আসলে ২০ ডলারই যথেষ্ট। আমি ১ ঘণ্টার মাঝেই করে দিতে পারবো।
ব্যাপারটায় ক্লায়েন্ট বোধহয় খুব মজা পাইছে। সে আমাকে ২০ ডলারে হায়ার করলো। আরও ৫ ডলার বোনাসও দিল। এরপর তার আরো অনেক কাজও করেছি আমি।
ঘটনাটা বললাম এইজন্য যে, ক্লায়েন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করুন। কাভার লেটারের এটাই লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য।