“জিপিএ বেশি গুরুত্বপূর্ণ নাকি কাজ শেখা বেশি প্রয়োজন”
– এটি নিয়ে বিতর্ক বিশ্বের সব দেশেই আছে। এটা নিয়ে আলোচনা হয় সব বিষয়েই। কেউ কেউ মনে করে কাজ জানলেই হবে, জিপিএ দিয়ে কিছু যায় আসে না। আবার অনেকেই জিপিএ ছাড়া ক্যারিয়ার এবং ভবিষ্যৎ শেষ এমন রব তুলে। আমার পর্যবেক্ষণ থেকে মনে হয়েছে বেশিরভাগ মানুষই নিজ নিজ জায়গা থেকে পক্ষ নিয়ে উত্তর দেয়। যে মানুষের চাকুরী এবং ভবিষ্যৎ ভিত্তি জিপিএর উপরে তার কাছে এর গুরুত্ব বেশি এবং উল্টো-পক্ষের কাছেও একই। এই দুপক্ষকে বাদ দিলে ৩য় আর একটা পক্ষ পাওয়া যাবে যারা দুইটার মাঝে একটা ভারসাম্য খুঁজে বেড়ায়। তাদের মতামত হলো, কাজ শেখা দরকার সাথে একটা মোটামুটি জিপিএও থাকা চাই।
#জয় এবং জয়া দুই ক্লাসমেট। দুইজনই কম্পিউটার নিয়ে পড়াশোনা করেছে। জয় গ্রেডকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে এবং ভালো গ্রেডের জন্য নিয়মিত পরিশ্রম করে গেছে। পাশ করার পরে জয় খুব দ্রুতই শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করে।
#জয়ার আবার গ্রেড নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই। ভার্সিটির শুরু থেকেই সে অন্যদের সাথে নেটওয়ার্কিং করা এবং মোটামুটি প্রোগামিং নিয়ে কাজ করতো। একাডেমিক পড়ায় আগ্রহ না থাকলেও নানান প্রবলেম সলভিং এ তার আগ্রহ ছিলো। অনলাইনে নানান ওয়েবসাইটে কয়েকশ প্রবলেম সমাধানও করেছে সে। পাশ করার পরে তার পরিচিত সিনিয়র এবং অন্যদের সাথে যোগাযোগ করে বেশ ভালো কিছু কোম্পানিতে সে আবেদন করে ফেললো রিকোমেন্ডেশন সহ। নিজের কাজের স্কিল, অনলাইন প্রোফাইল এবং কমিউনিকেশন স্কিল দিয়ে ভালো একটা কোম্পানিতে যোগদান করে ফেললো ডেভেলপার হিসেবে।
উপরের দুইটা উদাহরণ থেকে সহজেই বুঝা যায়। জয় এবং জয়ার গ্রেড নিয়ে ভাবনা আলাদা হলেও চাকুরী কিংবা ভবিষ্যৎ নিয়ে এটা কোন সমস্যা হয়নি। দুইজনের মাঝে একটা কমন জিনিস রয়েছে। তা হলো কোন দিকে নিজের সক্ষমতা বেশি তা বুজতে পারা এবং সেইভাবে কাজ করা। জয়ের কাছে রুটিন লাইফ মেনে পড়াশোনা করাটা শ্রেয় ছিলো। সে ওই দিকেই বেশি মনোযোগ দিয়েছে এবং সেভাবেই নিজের ক্যারিয়ার ঠিক করেছে। জয়াও একই কাজটা করেছে। গ্রেডের প্রয়োজন নেই মনে করে সে বসে থাকেনি। নিজে যে কাজে ভালো তা করে গেছে এবং নিজের ভবিষ্যতের জন্য খুব ভালো একটা রিজিউম তৈরি করেছে।
জিপিএ কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ বা আদৌ এর প্রয়োজন আছে কিনা এই চিন্তা বাদ দিয়ে কোন কাজে আমি ভালো এবং কোন কাজ আমি করতে চাই তা নিয়ে চিন্তা করা বেশি প্রয়োজন। দিনশেষে পরিশ্রমটাই সত্য। যাই-ই করতে চাইনা কেন পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। নিজের স্ট্রেনথ বুজতে পেরে সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করতে পারাটাই আসল কথা।
কেউ যদি কোন কিছুতে ভালো হয় তাহলে সে ওটাকেই ব্যবহার করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। যে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টে ভালো তার উচিত এইটাতেই বেশি করে মনোযোগ দেয়া এবং নিজের দক্ষতাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া। যে একাডেমিক দিকে ভালো তার উচিত ভালো রেজাল্ট এবং শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে কাজ করা। জিপিএ কিংবা কোন কাজের মাঝে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে কিছু নেই। গুরুত্বপূর্ণ নিজের যোগ্যতা বুঝতে পারা এবং নিজের শক্তিশালী দিকটাতে আরো শক্তিশালী করা।