ফেব্রুয়ারি ২০১৮: অর্গানাইজ এভরি টাস্ক

304

১ ফেব্রুয়ারি:

এই মাসের লক্ষ্য হচ্ছে সব কাজ অর্গানাইজ করে ফেলা। যে কোন কাজ সেটা একাডেমিক, রিসার্চ বা অন্য যে টাইপেরই হোক না কেন সেটাকে স্ট্রাকচারড করে ফেলতে হবে। ছোট-ছোট ভাগে ভাগ করে করে ফেলতে হবে। সেই প্রচলিত ঘটনার মত। একটা পিঁপড়া কিভাবে একটা হাতি খেয়ে শেষ করবে – ছোট ছোট কামড় দিয়ে ধীরে ধীরে। যে কোন কাজের ক্ষেত্রে এটা করতে হবে।

Task delegation
Task delegation

কাজ অর্গানাইজের আর একটা বিষয় হচ্ছে কাজ অটোমেটিক করে ফেলা বা ডেলিগেট করে ফেলা। যে কাজ আমার জায়গায় আর একজন করতে পারবে তা নিজে না করে অন্য জনকে শিখিয়ে দেয়া হচ্ছে ডেলিগেট। এটা অক্ষরিকভাবেই সময় সৃষ্টি করে। একটা কাজ করতে আমার ২০ মিনিট লাগতো। সেই কাজ যদি অটো হয়ে যায় কিংবা অন্য কেউ করে দেয় আমার হয়ে তাহলে আমার ২০ মিনিট বেঁচে গেলো। ভালোভাবে ভাবতে গেলে আসলে ২০ মিনিট সৃষ্টি হবে গেল অন্য কাজের জন্য।

২ ফেব্রুয়ারি:

দেশে যাইতে মন চায়। টাকা পয়সা একটা বড় সমস্যা। পড়াশোনা করতে করতেই জীবনের বেশিরভাগ সময় শেষ হয়ে গেলো। এখন মনে হচ্ছে শেষ করতে করতে পুরোটাই নাই হয়ে যাবে। 😛

বাংলাদেশি হিসেবে আমরা সবসময়ই ইনফিরিয়র মানসিকতাই ভুগি। আমরা মনে করি যে, অন্যদের কোন তথ্য দিলে বা কোন কিছুতে হেল্প করলে পরে নিজের সুযোগ নষ্ট হয়ে যাবে বা নিজের আর অন্যের মাঝে কোন তপাৎ থাকবে না। এই চিন্তার কারণে আমরা এখনও টেনে ধরা জাতি হয়ে আছি।

৩ ফেব্রুয়ারি:

আমার মাঝে মাঝেই মনে হয় ঘুম জিনিসটা না থাকলে ভালো হতো। যদিও আমি জানিযে ঘুম না থাকলে কি পরিমান ভয়াবহ হতো বিষয়টা। সবকিছুই আন-বিয়ারেবল হয়ে যেত। এখন দিন শেষে ঘুমিয়ে গেলে অন্তত ঘুম থেকে উঠতে উঠতেই মনে হয় পরিস্থিতি শান্ত। যদিও ঘুমের আগে সবকিছুই মাথা-খারাপ করা ছিলো।

রাত ২টায় মাঝে মাঝে ঘুম আসতে চায় আবার একইসাথে ঘুমাতে ইচ্ছে করেনা। মন আর শরীর একে অন্যের কথা শুনতে চায়না এই সময়। শুধু মাত্র একটা সময়ই মন আর শরীর এক হয়ে আমার ঘুমাতে চায়। তা হলো দুপুরে ভাত খাওয়ার পরে!

আজকে পার্টি ছিলো। আশিকের বিয়ের পার্টি। পার্টিগুলোতে খাওয়া থেকে গল্প আর খেলায় মজা বেশি হয়। আজকেও এর ব্যতিক্রম ছিলো না। আজকে অনেক দিন পরে আমি আবার ডেডলাইনের দেড় দিন আগে হোমওয়ার্ক জমা দিয়ে বসে আছি। নরমারি ডেডলাইনের দিনের আগে খোলাই হয় না। 😛

৪ ফেব্রুয়ারি:

মানুষ নাকি তার কল্পনার সমান বড়! সমস্যা হচ্ছে আমরা কল্পনাই করতে থাকি, কিন্তু কল্পনা বাস্তব করার জন্য সময় দেই না। কল্পনার সাথে সাথে বাস্তবতাকে বুঝে নিয়ে কিছুটা কাজে লাগালে অবশ্যই মানুষ তার কল্পনার সমান বড় হয়ে যাবে।

ব্যডমিন্টন খেলায় ভালো সময় যাচ্ছে। ছোট বেলায় খেলতে পারি নাই দেখে সব বুড়া বয়সে খেলে নিচ্ছি সব। অভারলোড হয়ে যাবে। 😛

৫ ফেব্রুয়ারি:

দুপুরে খাওয়ার পরে আমার মরার মত ঘুম আসে বলা যায়। শরীর একদম ছেড়ে দেয়। যদি জোর করে জেগে থাকি তাহলে দেখা যায় যে মাথা ধরে যায় বা বলা যায় ঘাড়। জানিনা এটা কোন মেডিকেল বিষয় কিনা! তবে সবসময় এমন ছিলো না। এটা নিয়ে আপাতত কিছুদিন পড়াশোনা করা দরকার!

রিসার্চের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ দুইটা বিষয় হলো গণিত এবং এনালাইটিক্যাল এবিলিটি। অবশ্য বোধহয় যে কোন বিষয়েই এই দুইটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি গণিত কিছু না বুঝেই প্রোগ্রামিং পারতাম যদিও। কিন্তু রিসার্চে গণিত লাগবে বলেই মনে হচ্ছে। আপাতত অনলাইনে প্রোবাবিলিটি কোর্স দেখা শুরু করতে হবে।

আজকের দিনটাও অন্যদিনের মতই। ক্লাস, খাওয়া, ঘুম এবং কম্পিউটারে আজাইরা কাম। আজকাল দেশে যাইতে মন চায় খুব।

৬ ফেব্রুয়ারি:

Life is going on… অন্য সব দিনের মতই। প্রফেসর ছিলো না তাই ক্লাস ও মিটিংও ছিলো না। ইভা চেষ্টা করে যাচ্ছে মাস্টার্সের জন্য। আমার দিন যাচ্ছে খেয়ে, ঘুমিয়ে, ব্যডমিন্টন খেলে এবং ল্যাবে। যদিও ল্যাবে কম সময় দিচ্ছি। অবশ্য এই মাস ব্যস্ততায় যাবে। এক একটা দিন পার হবে আর প্রেশার বেড়ে যাবে। সবগুলো কাজ এমন একটা পর্যায়ে যাবে যখন ট্যাগলাইন হবে Now or never!

৭ ফেব্রুয়ারি:

বিকেলে ল্যাবে যাওয়ার কথা ছিলো। মাথা ধরার জন্য আর যাওয়া হলো না। ঘুম এবং খাওয়া একটু উল্টা-পাল্টা হলেই ধরা!

এনিমেশন আমার ভালো লাগতো-না। আজকাল ভালো লাগা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ইভা Coco দেখানোর পরে। ও না বললে হয়ত আরো অনেকদিন পরে দেখা হতো। কালকে Inside out দেখলাম। এইটাও অসাধারণ!

৮ ফেব্রুয়ারি:

ব্যাডমিন্টন খেলে খেলে মোটামোটি সব শক্তি শেষ করে দিচ্ছি। ওজন যা বাড়ার দিকে ছিলো তা আবার নাই হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। অবশ্য আমিও চাই যে কমে যাক।

আমেরিকার মেডিকেল সিস্টেমটা একদম গলা কাটা। টেস্ট না করে কিছু করবে না। আর টেস্ট করে ভিটামিন বি টেবলেট ধরাই নিয়ে শত-শত ডলার নিয়ে যাবে! কিছুই করার নেই। তবে আশার কথা টাকা গেলেও কিছু সেবা অন্তত পাওয়া যায়।

৯ ফেব্রুয়ারি:

Wonder খুবই চমৎকার একটা মুভি। আজকে আমি আর ইভা মিলে দেখলাম। চেহারা দিয়ে নয়, গুণ এবং আচরণ একজন মানুষের জন্য মুখ্য হওয়া উচিত। আর জীবনে কঠিন সময়ে পরিবারই পাশে দাড়িয়ে থাকে এবং সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে নানান সমস্যায় মাঝে দিয়ে যায় – এইসব ছিলো এই মুভি মূল কথা। ভালো লাগার মত একটা মুভি।

দিনটা অন্য সব দিনের মতই। ব্যাডমিন্টন খেলা, ল্যাব, খাওয়া ও ঘুম।

১০ ফেব্রুয়ারি:

উইকেন্ড এবং বাসায় সারাদিন এনজয়। সন্ধ্যার পরে ব্যাডমিন্টন, রাতে মুভি এই করেই দিন শেষ। 😛 তবে রাতে হোমওয়ার্ক করে জমা দিয়ে দিয়েছি। এইবারও একদিন আগে হোমওয়ার্ক করতে পেরেছি। 🙂

১১ ফেব্রুয়ারি:

সেইন্ট লুইস গিয়েছিলাম। নতুন বছরের সবচেয়ে বড় বাজার করে নিয়ে আসলাম। মাছ, মাংস, নানান শাক-সবজি, এছাড়াও আরো নানান খাবার। দেশে একসাথে এত বাজার কল্পনাও করিনি। অবশ্য বাজার ১,২ দিন বা ১ সপ্তাহের জন্যে না। ১মাসের জন্য করা। 😛

নতুন একটা সবজি কিনে নিয়ে আসছি। নাম বিটস। অদ্ভুত, কাটলে লাল রং বের হয়। ইভা ভয়ে ভয়ে কাটাকাটি করছে। অবশ্য মাসুদ ভাই ও শাহীন বলেছে খেতে নাকি খুব মজা। 😀

ইভা ছবি তুলেছে সব বাজারের। একটা ছবি এই লিখার সাথে জুড়ে দিতে হবে। পরে ওর থেকে নিয়ে জুড়ে দেয়া হইবে। 😛

১২ ফেব্রুয়ারি:

এপ্রিলে পেপার সাবমিট করবো বলে ঠিক করেছি। কে জানে কতটুকু কি হয়। পাইথন কোসের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে প্রজেক্ট করবো বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কাজ যাই হোক মজা পাওয়া যাবে আশা করি। Kaggle এ কনটেস্টে নেমে গেলাম। যদিও পজিশন ৯৪১, তবুও তো কিছু একটা শুরু হলো। শুরু হলো মেশিন লারনিং নিয়ে রিয়েল কিছু ইমপ্লিমেন্টেশন। যদি এর থেকে ভালো কিছু হয় তাহলেই হলো।

রাতে ঘুম ভেঙে যায় এবং এরপর ঘুম আসে না। অদ্ভুত এক সমস্যা। রাতভর কেন জানি তন্দ্রাছন্ন কাটে কিন্তু গভীর ঘুম হয় না। আর দিনে কাটে রাণিক্ষেত রোগে ভুগা মুরগীর মত 😛

১৩ ফেব্রুয়ারি:

ভালোবাসা দিবস নিয়ে অনেকের মাঝে ক্রেজ কাজ করে। আমার মাঝেও করতো। এখনও করে। কিন্তু এর এর মানেটা ভিন্ন আমার কাছে। ভালোবাসা দিবস কি সবাই জানে। কিন্তু যা জানেনা তা হচ্ছে এর ইতিহাস। এর ইতিহাস অনেক প্রাচীন এবং ইতিহাস রোমানদের কাছ থেকে আসা। আজ থেকে ২৩০০-২৪০০ বছর আগে যতটুকু মনে পড়ে আমার। যোদ্ধাদের বিয়ে করা নিষিদ্ধ ছিলো। এর পরেও দুইজন সেইন্ট কিছু সৈন্যদের বিয়ে পড়ায়। এই দুইজন সেইন্টের নাম ছিলো ভ্যালেন্টাইন বা ভ্যালেন্টাইনাস। ওদের সম্মানেই মূলত এই দিন পালন করা হয়। যাই হোক ইতিহাস ইতিহাসই থাক। ভালোবাসা দিবস শুধু কাপলদের জন্য। যুগলদের মাঝে ভালোবাসা বজায় থাকুক কিন্তু তা হোক সুন্দর ও লোক দেখানো নয় এমন।

আজকে দিনটা আমার জন্য অন্যরকম। আজকের দিনটা আমার জন্য Beginning for new beginning।  হুট করে চিন্তাভাবনায় নতুন হাওয়া লাগতে পারে। নতুন করে চিন্তা করতে হতে পারে জীবন নিয়ে। বছরধরে সমাধান করা ইকুয়েশন পাল্টে যেতে পারে। আর সবই হতে পারে নতুন কিছুর জন্য। নতুনের জন্য।

দিনপঞ্জি হিসেবে, আজকে ক্লাস ছিলো। বোরিং ক্লাস! এছাড়া বাদবাকি সবই অন্যরকম।

১৪ ফেব্রুয়ারি:

বামের ছবির মাছটার নাম পমফ্রেট। দেখতে আমাদের দেশের রুপচাদা এর মত কিছুটা। যদিও স্বাদের দিক থেকে ধারে কাছে নেই। আমাদের দেশের মাছের যে স্বাদ এটা পৃথিবীর আর কোথাও নেই বলেই আমার মনে হয়। যাই হোক আমেরিকাতে এই মাছটাই অন্য মাছ থেকে খেতে ভালো। তবে ইভা এই মাছ রান্নাকে অন্য লেভেলে নিয়ে গেছে। দেশি মাছের একটা স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে। 😀

ক্লাস, ল্যাবে আর ব্যাডমিন্টন খেলেই আজকের দিন গেলো বলতে গেলে। সন্ধ্যার পরে গেলাম গোলাপ কিনতে। গোলপা আর বেলি ফুল আমার ভালো লাগে। এখানে বেলি নেই। গোলাপে গন্ধ নেই। কিন্তু গোলপের ফুলের জন্য খাবার আছে। পানির সাথে মিশিয়ে দিলে গোলাপ বেশ কিছুদিন ভালো থাকে। 😛

১৫ ফেব্রুয়ারি:

কানে মাঝে মাঝে ঝিঁঝিঁ (বানান ঠিক কিনা জানিনা। চেক করতে ইচ্ছে করছে না) পোকার শব্দ শুনতে পাই। আগে ভাবতাম এটা নরমাল। কিছুদিন আগে জানলাম যে সবার এমন না। ডাক্তার ঠিকমত শুনতে পাই কিনা টেস্ট করলো। নানান টেস্ট করে বলেযে, একটা টেস্টে ঝামেলা হচ্ছে আবার একটু করতে হবে। আবার করে বললো যে সব ঠিক আছে। ২য় বার টেস্ট করার কারণ হচ্ছে আমার কান নাকি কোন একটা ফ্রিকোয়েন্সিতে রেসপন্স করেছে যেটা করার কথা নয়। পরের টেস্টেও একই রেজাল্ট। ডাক্তার বললো যে আমি ভালো শুনতে পাই। বেশি শুনি একটু এটা সমস্যা নয়। আপাতত মনে হচ্ছে কোন ওষুধ পত্র দিবে না। ঝিঁ-ঝিঁ শব্দ নিয়েই থাকতে হবে। কখনও একা ফীল হওয়ার চাঞ্চ নাই। 😛

গত কয়েকদিন অন্য লেভেলের খানা-দানা হচ্ছে। চিংড়ি, কলমি-শাক, মাছ, লাউ এসব। কি আছে আর জীবনে! 😀

Comments

comments