২০১৮ তে আমি জীবনটা আর একটু গুছিয়ে নিব বলে ঠিক করেছি। শুরুটা করেছি ফেইসবুক ব্যবহার বন্ধ করে। একদম ১০০শত ভাগ বন্ধ করা হয়নি অবশ্য। মাঝে মাঝে ফেইসবুক পেইজের জন্য টুকটাক পেইজের এপ্লিকেশনটা ব্যবহার করা হয়। ইমেইলে ফেইসবুক নিয়মিত নোটিফিকেশন পাঠায়। ওখান থেকে জানতে পারি ট্যাগ হচ্ছি, কেউ মেসেজ দিচ্ছে এইসব তথ্য।
জন্মদিনের কারণে হুট করে নোটিফিকেশন বেড়ে গেছে খুব। আগেই হাইড করে রাখা দরকার ছিলো এই তথ্যটা। এত উইশ এবং মেসেজের কারণে মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে ফেইসবুকে গিয়ে উত্তর দিয়ে আসি। কিন্তু শুরু করতে চাই না আবার। এই জন্যই এই লিখাটি লিখতে বসলাম।
যারা যারা আমাকে জন্মদিনের জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সবার কাছে আমি অনেক কৃতজ্ঞ। সবাইকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। কিছু মেসেজ সত্যিই অনেক আবেগের ভালোলাগার। 🙂 ♥
বয়স যত বাড়তে থাকতে জন্মদিন নিয়ে মানুষের আগ্রহ ব্যস্তানুপাতে কমে যেতে থাকে। তখন নিজের জন্মদিনে আগ্রহ কমে যায়, নতুন জন্মের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। বাচ্চাদের জন্মদিনে নিজের কাছে যে পরিমাণ আনন্দ লাগে নিজের জন্মদিনে ততটা আনন্দ লাগে না বরং কেমন জানি একটা বিষাদ কাজ করে মনে। অনেক দিন ধরেই মনে হচ্ছে নতুন প্রজন্মের জন্য কি রেখে যাচ্ছি আমরা, কি পাচ্ছে ওরা আমাদের থেকে। ভয় লাগে যখন মনে হয় ওদের দেখা ভবিষ্যতের স্বপ্নগুলো এবং সেগুলো বাস্তবায়নের পথটা খুবই অদ্ভুত ও দুর্ভোগের হতে পারে। অন্য দেশ নিয়ে আমি জানিনা তাই চিন্তাও করি না। চিন্তাটা নিজের দেশ নিয়ে। দেশে ছোট-ভাই বোন আছে তাদের নিয়ে।
আমাকে অনেকেই বলে দেশের বাইরে সেটেলড হয়ে যেতে। সেটেলড হওয়ার বিষয়টা এত সোজা নয়। আবার হতে পারলেও হওয়া উচিত কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু যে কারণে সেটেলড হয়ে যেতে বলে ওটা খুব ভাবনার। সেটেলড হতে বলে নিরাপত্তার অভাবের কারণে, হতে বলে পরিবেশ দূষণের কারণে, খাবারে ভেজালের কারণে, ভালো শিক্ষা ও চিকিৎসার অভাবের কারণে, সেটেলড হতে বলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা বিবেচনা করে, সেটেলড হতে বলে স্বপ্ন পূরণের জন্য। যারা বলে সবাই বিশ্বাস করে দেশে এইসবগুলো নিয়েই সমস্যা আছে। দেশে যদি এই সবকিছু নিয়ে সমস্যা থাকে তাহলে দেশে আছেটা কি? যারা দেশে আছেন তারা কি নিয়ে বেঁচে আছেন? কি আশায় বেঁচে আছেন?
প্রায় প্রতিদিনই আমি এইসব নিয়ে ভাবি। ভাবি এই সমস্যাগুলো থেকে সমাধানের কোন পথ আছে কিনা? সত্যি বলতে গেলে তেমন কোন কিছু পাই না ভেবে আমি। ফেইসবুকে আমি দেখতাম একটা হতাশ জনগোষ্ঠী। যারা সুযোগ পেলেই নিজের যোগ্যতা দেখায় অন্যের সমালোচনা করে, গালি দিয়ে। যারা সকাল-বিকাল অভিযোগ করে যাচ্ছে। মেসেজে যাকে বা যে জিনিসটাকে গালি দিচ্ছে সেই বিষয়ের পোস্টে বা সেই ব্যক্তি বাহবা দিচ্ছে পাবলিক্যলি। এটা কঠিন একটা সংকট মনে হয় আমার। এমন না যে, ভালো চিন্তা বা কাজ করার মানুষ নেই। ভালোও আছে, কিন্তু তা হারিয়ে যাচ্ছে দিনদিন। বাধ্য হয়ে একটা বিষয় খারাপ জেনেও মেনে নিতে হচ্ছে ধীরে ধীরে এবং একসময় এটা অভ্যেস হয়ে যাবে। যেমন খাবারে ভেজাল। ভালো-ভেজালহীন খাবার দেশে পাওয়া মুশকিল। কেননা সিস্টেম এমন হয়ে গেছে যে অনেকেই বুঝতেই পারছেনা যে তারাও অন্যায় করছে।
কারো সাথে আড্ডা দিতে গেলেই দেশ নিয়ে তখন সবার হতাশা বের হয়ে আছে। সবগুলো ফিল্ডেই যে ঘুণে ধরে গেছে তা-নিয়ে সবার ঐক্যমত্যে আসতে সময় লাগে না। কিন্তু কিভাবে এর সমাধান হবে তা নিয়ে কেউ একমত হতে পারেনা। সবাই পালিয়ে বাচার সিদ্ধান্ত নেয় শেষ পর্যন্ত। আমি নিজেও দিন দিন দ্বিধায় পড়ে যাচ্ছি। একজন বাচ্চা আমাদের দেশে এখন সুন্দর স্বপ্ন নিয়ে বড় হয় না। আমার ছোটভাইকেও দেখি। চিন্তা ভাবনা খুব অদ্ভুত। কোন কিছু করার আগেই চিন্তা করে ফেলে এটায় লাভ কি হবে! গেইম খেলে কেননা গেইমের আইডি বিক্রি করে নাকি টাকা কামাই করছে তার ক্লাসমেট কেউ। যে বয়সে একটা বাচ্চা মাঠে খেলার কথা চিন্তা করবে, চিন্তা করবে বড় হয়ে এটা করবে ওটা করবে, কিংবা স্বপ্ন দেখবে এখানে যাওয়ার-ওখানে ঘুরার, মনে থাকবে হাজারও প্রশ্ন সেই বয়সে সেই বাচ্চা গেইম খেলে টাকা কামাই করার স্বপ্ন দেখে, ফেইসবুক পেইজ খুলে চিন্তা করে কিভাবে টাকা আয় করবে! খুবই উদ্ভট একটা অবস্থা। এর থেকে আমাদের বের হয়ে আসা খুব দরকার। নয়ত ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে আমরা খুব অপরাধী হয়ে থাকবো। দান করলে নাকি মারা যাওয়ার পরেও নেকি হয় অনেক ক্ষেত্রে। যে কাজগুলো আমরা করে যাচ্ছি তাতে নিশ্চিতভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম আমাদের পাপ কামাই হতে থাকবে।
আমি নিয়মিত চিন্তা করি কোনভাবে এ থেকে বের হওয়া যায় কিনা। সবাই যদি চিন্তা করতে থাকি আমরা হয়ত কোন সমাধানের পথ খুঁজে পাব। তবে চিন্তা করে পথ খুঁজে পাওয়া না গেলে সবাই মিলে সচেতন হলে এবং চেষ্টা করলে অবশ্যই অবস্থার উন্নতি হবে। ছাড়া-ছাড়া ভাবে অনেকেই ভাবে অনেককিছু। কিন্তু সামষ্টিকভাবে কাজ না করলে, সবাই চেষ্টা না করলে দিন দিন অবস্থা খারাপই হতে থাকবে। ভয় লাগে অচিরেই ঘরে ঘরে হয়ত আমরা দেখব নানান ব্যাধি, অন্যায়-অবিচারের হাত থেকে হয়ত কেউই রেহাই পাবো না, মানসিকভাবে বিকলাঙ্গ ও মেরুদণ্ডহীন জাতিতে পরিণত হবো আমরা। যার যার অবস্থা থেকে আমাদের কাজ করা প্রয়োজন। নয়ত নিজেদের ভবিষ্যত প্রজন্ম যখন প্রশ্ন করবে, কি কারণে তাদেরকে এমন একটা পরিবেশে বড় করলাম আমরা, তাদের জন্য রেখে গেলাম এমন একটা পৃথিবী, তখন উত্তর দেয়ার কিছু থাকবে না। হাসপাতাল যদি কপালে জুটে তাহরে রুক্ষ বিছানায় শুয়ে শূন্য দৃষ্টি মেলে বসে থাকতে হবে।
আসুন নিজেরা ভালো কিছু করার চেষ্টা করি, সচেতন হই। সুন্দর একটা পৃথিবী আসুক নতুনদের জন্য, আমাদের জন্য। আমার জন্মদিনে সবাই অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই, ধন্যবাদ জানাই সুন্দর আগামীর প্রত্যাশা নিয়ে।
বি.দ্র.: আমি ফেইসবুকে যাইনা। মেসেজও চেক করিনা। কারো কোন দরকার হলে ইমেইলে আমাকে পাওয়া যাবে। ইমেইল: mdyasinkabir@gmail.com